প্রকাশিত:
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
কৃষিমন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতারসুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করেচলছে। যেন দেখার কেউ নেই।
কৃষিমন্ত্রণালয়ের টেন্ডার নোটিশের কপি ও কার্যাদেশ পর্যালোচনাসহএকাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতেরআমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সারহিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানিরজন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে মন্ত্রণালয়।
এবারসেটা করা হয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যেআন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারেরদাম ৩০-৪০ শতাংশপর্যন্ত বেড়ে গেছে। সাড়ে নয় লাখ টননন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাইএকটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়।
যেখানেটেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্টপর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারেরমাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উল্টো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে।
কৃষিমন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ২১ আগস্টেরমধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া জন্য আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরঅতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম।
পরবর্তীতে, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য আমদানিকারকেরা রাজি হলে গত ২১ আগস্টেরমধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারা মন্ত্রনালয়ে সম্মতিপত্র চায় মন্ত্রনালয়।
আমদানিকারকদেরনিকট থেকে সম্মতিপত্র গ্রহণ করার ৩ সেপ্টেম্বর রাতসাড়ে ৯টার দিকে কোন প্রকার নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে এবংসার আমদানি সংক্রান্ত পরিপত্র (ধারা ৮-গ) অনুযায়ীপ্রাপ্ত দরের মধ্যে সর্ব নিম্ন দরের ক্রমানুসারে কার্যাদেশ প্রদান করার বিধান থাকলেও মন্ত্রণালয়ের বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে দরপত্রের প্রাপ্ত দরের বাইরে গিয়ে মনগড়া ভাবে নেগাশিয়েশনের মাধ্যমে মোঃ মামুনুর রশীদের দেশ ট্রেডিং কপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিংনামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুইধরণের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলারএবং ৮৭৪ ডলার) সার আমদানির কার্যাদেশ প্রদান করেন মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরঅতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম ও যুগ্ম সচিবমো. খোরশেদ আলম।
শুধুতাই নয়, একজন ব্যক্তির মালিকানাধীন তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মনগড়া ভারে একাধিক দরে সার সরবরাহ করার অনুমতি প্রদান করে। এর মধ্যে দেশট্রেডিং কপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বাল্ক ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিংনামে দুটি প্রতিষ্ঠানকে ৪০হাজার ম্রেট্রিক টন সার দুইধরণের দরে (প্রতি টন ৮৪৮ ডলারএবং ৮৭৪ ডলার) আমদানির অনুমতি দিয়েছে। অথচ এই কোম্পানী মন্ত্রণালয়কেএই দরে কোনো প্রাইজ অফার করেনি।
বাল্কট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং আর আর হোডিংমন্ত্রণালয়কে যে প্রাইজ দিয়েছেতার থেকে অনেক বেশি দরে তাদেরকে আমদানির অনুমতি দিয়েছে।
কৃষিমন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতারসুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়ম করেচলছেন। যেন দেখার কেউ নেই।
কৃষিমন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষ পুরোপুরো স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়ে একটিমাত্র আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার জন্য এ ঘটনা ঘটানোহয়েছে এবং একটি মাত্র প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ প্রতিষ্ঠানকেই সার আমদানির জন্য অনুমতি দেয়া হয়।
অপরপ্রতিষ্ঠানসমূহ যারা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবকে সম্মান জানিয়েছিল তাদেরকে সার আমদানির অনুমোদন দেয়া হয়নি। বরং আরো সার আমদানির জন্য ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫তারিখ পুণরায় আরেকটি দরপত্র আহ্বান করেছে। মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এবং অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে কর্তৃপক্ষ নজিরবিহীন এই কাজ করেছে।মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত এই নজিরবিহীন কাজেদুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে।
টেন্ডারেরসর্বনিম্ন দরদাতার দরের বাইরে গিয়ে নেগোসিশশেনর মাধ্যমে বিধি লংঘন করে দুর্নীতি করা হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী ফ্যাসিস্টের এজেন্ডা বাস্তবায়না দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে সংকটে ফেলে বাজারে অব্যবস্থাপনা সৃষ্টির গভীর চক্রান্ত করা হয়েছে। এছাড়া দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে মিশরেরএকজন একজন ঠিকাদার কে ফোন করেবাংলাদেশের মন্ত্রনালয়ের টেন্ডার আমি নিয়নতন করি । তুমি যদিআমার সাথে চুক্তি না করো তাহলেবাংলাদেশে তুমি কোন সার সরবরাহ করতে পারবেনা।
এবিষয়েএবং কি ভাবে তারএকক তিনটি প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছেন সে বিষয়ে দেশট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মোঃ মামুনুর রশীদ কে ফোন করাহলে তিনি বলেন আমি কাজ কি ভাবে পেয়েছিমন্ত্রণালয় থেকে জেনে নিন। আমি কিছুই বলবো না । দেশট্রেডিং কর্পোরেশনের
অনিময়, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও মোটা অংকেরউৎকোচ গ্রহণ করে আমদানির অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কৃষিমন্ত্রণালয়ের সৎ উপদেষ্টার সরলতারসুযোগ নিয়ে সচিবসহ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নজিরবিহীন এই অনিয়মের ঘটনাঘটিয়েছে তা খুবই উদ্বেগজনক।
যদিএমনটি হয়ে থাকে, একই স্টিমেট দিয়ে রাতের আঁধারে একটি কোম্পানিকে আমদানির অনুমতি দেওয়ার ঘটনা ঘটে তবে সেটা তদন্ত করা উচিত। প্রয়োজনে এই টেন্ডার প্রক্রিয়াস্থগিত রাখা উচিত। পরিবর্তন দরকার। আগের সিস্টেমে যদি অনিয়ম হয় তা দুঃখজনক।সবকিছুতে জবাবদিহি থাকা উচিত। লটারিং সিস্টেম থাকা সত্বেও তা না মানারবিষয়টিও আমাদের ভাবায় যে সেখানে কিপরিমান আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। আর্থিক অনিয়ম ও মানি লন্ডারিংয়েসাথে যারা জড়িত তাদের সকলকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
উল্লেখ্যযে, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দোসর ও বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং সার আমদানির অনিয়মের সাথে জড়িত জড়িত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এমদাদউল্লাহ মিয়ান, সাবেক আইন প্রতিমমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের একান্ত সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম, বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের একনিষ্ঠ সহযোগী ও ভৈরবের সাবেকউপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বতর্মানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব খোরশেদ আলম এবং সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের একান্ত সচিব ও কৃষি মন্ত্রণালয়েরবর্তমান উপসচিব মনিরুজ্জামান।
এসবঅভিযোগের বিষয়ে দেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের প্রোপাইটর মো. মামুনুর রশীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বললে চাইলে তিনি বলেন, টেন্ডারের বিষয়ে আপনার কিছু জানার থাকলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারা জানাবে আমি কিভাবে পেলাম । আমি শারীরিকভাবেঅসুস্থ কথা বলতে পারবোনা বলেই মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।
এসববিষয়ে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়েরঅতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার মোবাইলে কল করা হলেতারা কেউ ধরেননি। পরে খুদেবার্তা পাঠানো হলেও এ প্রতিবেদন লেখাপর্যন্ত তারদের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।