প্রকাশিত:
৯ অক্টোবর, ২০২৫
মিশরের রাষ্ট্রীয় কাহেরা টিভির তথ্য অনুযায়ী, দুপুরের পর (০৯০০ GMT) আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। মিশরের শারম আল-শেখে চুক্তি স্বাক্ষর করে দুই পক্ষ। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর চুক্তি কার্যকর হবে। বিকেল ৫টায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
চুক্তির অধীনে, ইসরায়েল গাজা থেকে আংশিকভাবে সেনা প্রত্যাহার শুরু করবে এবং হামাস তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেবে। ইসরায়েলও বন্দী ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে। একটি সূত্র জানায়, চুক্তি স্বাক্ষরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেনা প্রত্যাহার শুরু হবে।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা জানান, গাজায় এখনো জীবিত ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তির আশা করা হচ্ছে। আরও ২৬ জনকে অনুপস্থিতিতে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে এবং দুজনের ভাগ্য অজানা।
চুক্তির খবর প্রকাশের পর গাজা ও ইসরায়েলে উল্লাস ছড়িয়ে পড়ে। গাজার রাস্তায় তরুণরা করতালি দেয়, যদিও শহরের তিনটি উপশহরে ইসরায়েলি হামলা রাতভর অব্যাহত ছিল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
খান ইউনিসের বাসিন্দা আব্দুল মাজিদ আবদ রাব্বো বলেন, “যুদ্ধবিরতি ও রক্তপাতের অবসানের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। শুধু আমি না, সমগ্র গাজা, আরব বিশ্ব এবং বিশ্বজুড়ে সবাই খুশি।”
তেল আবিবে ‘হোস্টেজেস স্কয়ার’-এ জিম্মিদের পরিবার উল্লাসে ফেটে পড়ে। আইনভ জাউগাউকার, যার ছেলে মাতান শেষ দিকের জিম্মিদের একজন, বলেন, “আমি শ্বাস নিতে পারছি না... এটা অবিশ্বাস্য। ওকে জড়িয়ে ধরার অপেক্ষায় আছি।”
এই চুক্তি এসেছে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সীমান্তবর্তী হামলার দ্বিতীয় বার্ষিকীর একদিন আগে । হামাসের সেই হামলায় ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৬৭,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।
ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, “আমি গর্বের সাথে ঘোষণা করছি যে ইসরায়েল ও হামাস আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। এটি স্থায়ী শান্তির দিকে প্রথম পদক্ষেপ।”
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু চুক্তিকে “কূটনৈতিক সাফল্য” ও “জাতীয় বিজয়” বলে অভিহিত করেছেন। তবে তার ডানপন্থী মিত্রদের কেউ কেউ হামাসের সাথে যেকোনো সমঝোতার বিরোধিতা করেছেন। অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ বলেন, “জিম্মিদের ফেরত আনার পর হামাসকে ধ্বংস করতে হবে।”
পরিকল্পনার পরবর্তী ধাপে ট্রাম্পের নেতৃত্বে ও প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের অংশগ্রহণে গাজার যুদ্ধ-পরবর্তী প্রশাসনের রূপরেখা তৈরির কথা বলা হয়েছে। সমর্থক আরব দেশগুলো বলছে, এই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠনের পথ খুলে দিতে পারে — যদিও নেতানিয়াহু স্পষ্ট করে বলেছেন, “এটি কখনও ঘটবে না।”
মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ এল-সিসি চুক্তিকে “ঐতিহাসিক মুহূর্ত” বলে আখ্যা দিয়েছেন। সৌদি আরব জানিয়েছে, এটি অঞ্চলজুড়ে ন্যায়সঙ্গত ও স্থায়ী শান্তির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ।
বিশ্বের দৃষ্টি এখন এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব ও পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপের দিকে। যদিও কিছু হামলা এখনও অব্যাহত, তবু দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম বড় ধরনের শান্তির ইঙ্গিত দেখা দিয়েছে গাজায়।