প্রকাশিত:
১ ডিসেম্বর, ২০২৫

ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌড়নগর ইউনিয়নের ‘মা বাবার দোয়া’ নামের একটি ট্রলার ১০ নভেম্বর রাতে ১৩ জন জেলের সঙ্গে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ ঘাট থেকে সাগরে মাছ ধরতে ছেড়ে যায়। পাঁচ দিন পর ফেরার কথা থাকলেও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারগুলো হতাশ হয়ে পড়ে।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন: ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চরকালাচাঁদ গ্রামের মো. সাব্বির হোসেন, কুলচড়া গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন, মো. শামীম, মাসুদুর রহমান, মো. খোকন, মো. সজিব, হরধরিঞ্জ গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম, ভেদুরিয়া গ্রামের মো. নাছির, ধলীগৌরনগর গ্রামের মো. আলম, মো. ফারুক মাঝি, মো. মাকসুদুর রহমান, মোহাম্মদ ফারুক ও আব্দুল মালেক।
জেলে মো. খোকনের স্ত্রী মোসাম্মত নিপা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “১০ নভেম্বর আমার স্বামী সমুদ্রে যায়। আজ ভিডিওতে শুধু তার চোখের পানি দেখেছি। আমার প্রতিবন্ধী ছেলে ও ছোট মেয়ে সারা দিন বাবাকে ডাকতে ডাকতে কাঁদছে। আমি নিজেও অসুস্থ ও সন্তানসম্ভবা। সরকারের কাছে অনুরোধ—আমার স্বামীসহ সব জেলেকে ফিরিয়ে আনুন।”
মো. সাব্বির হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, “চার মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজ দুপুর ১২:৩০টার দিকে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু বলতে পারেনি, শুধু কাঁদছিল। সবাইকে দ্রুত দেশে আনার আবেদন করছি।”
পরিবারের দাবি, ভিডিও কলটি ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জেলেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁরা জানিয়েছেন, খাওয়া-দাওয়া সহ অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এবং দ্রুত দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন।
ট্রলারের প্রধান ফারুক মাঝির ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৩ জন জেলের কেউ না ফেরায় তারা লালমোহন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন, ঘাটে খুঁজেছেন, সড়ক অবরোধ ও মানববন্ধন করেছেন। সব গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হওয়ায় অবশেষে খোঁজ পাওয়া গেছে।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “সাগরে মাছ ধরার সময় ট্রলার বিকল হয়ে ভেসে গিয়ে ভারতের সীমানায় চলে যায়। ভারতের নৌবাহিনী তাদের আটক করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা দায়ের করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে নিখোঁজ জেলেদের একজনের মুঠোফোনে ভিডিও কল দেন তাঁর চাচাতো ভাই। পশ্চিমবঙ্গের জেল-পুলিশের সহযোগিতায় স্বজনেরা কথা বলে এসব ঘটনা জানতে পেরেছেন। আমরা ইমিগ্রেশনে চিঠি লিখেছি। পরবর্তীতে সরকার তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।