ইনকিলাব
প্রকাশ:২৭ মে, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রফাইল ছবি
মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সড়ক নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় জাপানের ঋণ স্থগিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা বাংলাদেশ সরকারকে দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) দেওয়া জাইকার চিঠিতে ৪ জুনের মধ্যে সাতটি প্রশ্নের উত্তর চাওয়া হয়। যথাসময়ে উত্তর না দিলে ঋণ স্থগিতের কথা বলা হয়।
সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো কর্মকর্তা বলছেন, রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে ইতিমধ্যে একজন প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। বিষয়টি সরকারিভাবে জাইকাকে জানানোর পর সংস্থাটি ঋণ স্থগিত করতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে।
কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে জাপানের ঋণসহায়তায় সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর ও ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে। ২০১৩ সালে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশে জাপানের সবচেয়ে বড় ঋণসহায়তা।
আরও পড়ুন
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ৪৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ব্যয় ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৭৯১ কোটি টাকা। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রকল্প পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৩ মে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় ২৯ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলা করার দিন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জাহাঙ্গীর আলম জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি ৯৪টি ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সন্দেহজনক ১২৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা লেনদেন করেছেন।
জাইকা একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত খবর জুড়ে দিয়ে ইআরডিকে দেওয়া চিঠি দিয়েছে। ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকীকে চিঠিটি দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে। তিনি লিখেছেন, আসলে প্রকল্পে কী হয়েছিল, তা জানার আইনি অধিকার জাইকার রয়েছে। চিঠিতে সাতটি প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়।
আরও পড়ুন
২০১৩ সালে কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্পটি নেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৫৭ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে প্রায় ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এটি বাংলাদেশে জাপানের সবচেয়ে বড় ঋণসহায়তা।
এক. দুদক কি আসলেই জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেছে? দুই. জাহাঙ্গীর আলম কোন সময় থেকে কোন সময় পর্যন্ত সংযোগ সড়ক প্রকল্পে পিডি (প্রকল্প পরিচালক) ছিলেন? তিন. তাঁর অবৈধ সম্পদের মধ্যে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পদ রয়েছে কি না? চার. তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থ পাচারের অভিযোগে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কোনো লেনদেন রয়েছে কি না? পাঁচ. দুদক মামলা করেছে—এর মানে কি তদন্ত শেষ নাকি বিচার শুরু? নাকি তদন্ত চলমান? ছয়. দুদক কমিশন আইনের ধারা ২৭ (২) অনুযায়ী যদি জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে ব্যর্থ হন, তাহলে কি আদালত ধরে নেবেন তিনি অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছিলেন? সাত. মানি লন্ডারিংয়ের (অর্থ পাচার) বিচার কি বিশেষ কোনো বিচারক করবেন?
দুদক সূত্র বলছে, তারা প্রাথমিক অনুসন্ধানে ঘটনার সত্যতা পেলে মামলা করে। মামলার পর তদন্ত করে অভিযোগপত্র বা চার্জশিট দেওয়া হয়।
ইআরডি এখন জাইকার চিঠির জবাব তৈরি করছে। ইআরডির (জাপান শাখা) অতিরিক্ত সচিব মো. আবু সাঈদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি তাদের (জাইকা) দেওয়া সময়সীমার মধ্যেই জবাব দেওয়া যাবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে জবাব দেওয়ার পর তারা এ প্রকল্পে অর্থায়ন অব্যাহত রাখবে, নাকি বাতিল করবে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত।’
আরও পড়ুন
বিদ্যুৎকেন্দ্রটির জন্য ৪৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ২০১৫ সালে একটি প্রকল্প নেওয়া হয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের মাধ্যমে। ব্যয় ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৭৯১ কোটি টাকা। সংযোগ সড়কের কাজ শেষ।
সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে নানাভাবে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে ‘রিজার্ভ পেস্টিং’ দেওয়া হয়, যেখানে কার্যত কোনো কাজ নেই। এর আগে গত ২৪ অক্টোবর জাহাঙ্গীর আলম ও তাঁর স্ত্রী নুসরাত জাহানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটির কাজ এখনো শেষ হয়নি। তবে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর এর প্রথম ইউনিট ও ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট দ্বিতীয় ইউনিট বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায়। এর পুরো কাজ শেষ হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।
সাবেক ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো প্রকল্পে দুর্নীতি হলে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না, দেখতে হবে। সরকার যদি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়, তখন বিদেশি সংস্থা ঋণ স্থগিত করতে পারে। এ প্রকল্পে যেহেতু সরকার নিজে মামলা করেছে, সে ক্ষেত্রে প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ কম বলে মনে করেন তিনি।
তবে সমস্যা হলো মাতারবাড়ী প্রকল্পে ঋণ বাতিল করতে চাপে রয়েছে জাপানই। তিনটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)—জাপান সেন্টার ফর সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোসাইটি (জেএসিএসইএস), ফ্রেন্ডস ফর আর্থ ও মেকং ওয়াচের একটি যৌথ বিবৃতি ইআরডি সচিবকে দিয়েছেন জাইকার প্রতিনিধি ইচিগুচি তোমোহিদে।
আরও পড়ুন
দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। ২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তিনি প্রকল্প পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৩ মে তাঁর বিরুদ্ধে মা