info@weeklyinqilab.com|| 86-11 101 AVENUE, OZONE PARK, NY, 11416, USA
ব্রেকিং:

অর্থনীতি

অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

Next.js logo

ইনকিলাব

প্রকাশ:২ জুন, ২০২৫

নিউজটি শেয়ার করুন:

রাজনীতিতে নানামুখী অনিশ্চয়তা আছে। সমাজের নানা শ্রেণির মানুষের দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথে চলছে অস্থিরতা।

Thumbnail for অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

ফাইল ছবি | ইনকিলাব

এসব অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতায় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সংস্কার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নতুন বিনিয়োগে আস্থা পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে কর্মসংস্থান বাড়ছে না।

গত ৯ মাসে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে স্থিতিশীলতা এলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে সুখবর নেই। সার্বিক অর্থনীতিতে কিছু সূচকে অগ্রগতি হলেও কিছু খাতে আশানুরূপ হয়নি। মূল্যস্ফীতির উচ্চ গতি ঠেকানো গেলেও এখনো অসহনীয় পর্যায়ে আছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো, যা বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতিকে উন্নত করেছে। ভবিষ্যতে দাম বাড়বে এমন প্রত্যাশায় রপ্তানিকারকেরা আগের মতো নিজেদের অর্থ বিদেশে ধরে রাখছেন না। তাঁরা দেশে অর্থ নিয়ে আসছেন। এতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য ভালো হয়েছে।

তবে ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। ব্যাংক খাত নিয়ে আগের মতো আতঙ্ক নেই। ব্যাংক খাতে নতুন অধ্যাদেশ জারি হয়ে গেছে। আমানতকারীদের সুরক্ষায় উদ্যোগ নেওয়া হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক মানের নিরীক্ষা করার উদ্যোগ আছে। এসব উদ্যোগে বিনিয়োগকারীরা আস্থা ফিরে পাবে।

আরেকটি প্রত্যাশা হচ্ছে, আগামী বাজেট সীমিত অভিলাষের বাজেট যেন হয়। অতীতে অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে বাজেটের আকার বড় দেখানোর প্রবণতা ছিল।

 

সার্বিকভাবে বলা যায়, সামষ্টিক অর্থনীতিতে যে সংকটময় অবস্থায় ছিল, তা এখন নেই। খাদের কিনারা থেকে নিরাপদ জায়গায় আনা সম্ভব হয়েছে। এর মানে এই নয় যে সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। সংস্কার কার্যক্রম সঠিক পথে আছে।

অন্যদিকে রাজনীতিতে অনিশ্চয়তাও আছে। রাজপথের অস্থিরতাও চলছে। এমন কোনো দিন নেই যে শাহবাগ, কাকরাইল কিংবা মহাখালী বন্ধ হয়নি। যৌক্তিক কিংবা অযৌক্তিক দাবিদাওয়া নিয়ে রাজপথের কোথাও না কোথাও নেমেছেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। রাজপথ বন্ধ থাকলে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের উপার্জন বন্ধ হয়ে যায়। রাজপথের অস্থিরতা ভবিষ্যতে কমবে, এমন লক্ষণও দেখতে পাচ্ছি না। বরং বাড়বে এমন গর্জনই দেখতে পাচ্ছি।

এই ধরনের অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতা অর্থনৈতিক সংস্কারকে বাধাগ্রস্ত করে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংস্কারের ক্ষেত্রে তা দেখলাম। এই ধরনের নানা আন্দোলন সংস্কারকে আটকে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংস্কার কীভাবে হবে? নতুন বিনিয়োগ কীভাবে আসবে? নতুন বিনিয়োগ না হলে কর্মসংস্থান হবে না। এই ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে নতুন বিনিয়োগ আসবে না।

বাজেটের দুটি দিক আছে। অর্থায়ন কীভাবে হবে, কীভাবে খরচ হবে। বাজেটের অর্থায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি এনবিআর–বহির্ভূত খাত থেকে কর আদায় করা হয়।

 

এমন পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিতে হবে। মূল্যস্ফীতির কারণে যেন বাজেটে চাপ না পড়ে। কর্মসংস্থানের গুরুত্ব যেন পিছিয়ে না পড়ে। কাঠামোগত দুর্বলতা কাটাতে যেন উদ্যোগ থাকে। এ ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যে এখন যে স্থিতিশীল অবস্থা আছে, তা যেন বজায় থাকে।

আরেকটি প্রত্যাশা হচ্ছে, আগামী বাজেট সীমিত অভিলাষের বাজেট যেন হয়। অতীতে অর্থমন্ত্রীদের মধ্যে বাজেটের আকার বড় দেখানোর প্রবণতা ছিল।

বাজেটের দুটি দিক আছে। অর্থায়ন কীভাবে হবে, কীভাবে খরচ হবে। বাজেটের অর্থায়নে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি এনবিআর–বহির্ভূত খাত থেকে কর আদায় করা হয়। আগামী অর্থবছরে এই দুটি খাত থেকে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি আদায় করা মুশকিল। অতীতে কখনোই এত রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি। বাজেটঘাটতি দুই লাখ কোটি টাকার বেশি যেন না হয়। এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। সব মিলিয়ে বাজেটের আয়ের পরিমাণ ৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মতো হতে পারে। এর বেশি খরচের পরিকল্পনা করা হলে অভিলাষ বেশি হয়ে যাবে। এটা তখন ‘স্টেডিয়ামের’ বাইরে চলে যাবে, ‘স্টেডিয়ামের’ মধ্যে থাকতে হবে।

এদিকে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এত দিন ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামেননি। বাজেটের পর কী হয়, তাই দেখার বিষয়।

রাজস্ব আদায়ের কৌশল কী হবে, সেটা মূল বিষয়। আমার মতে, প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াতে হবে এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। তবে আয়করের হার বাড়ানো যাবে না। করজাল বাড়ানোর তত্ত্বকথা বলা সহজ; কিন্তু বাস্তবে করজাল বাড়ানো অনেক কঠিন। এমন বাস্তবতার ওপর নির্ভর আয়কর বাড়ানো কঠিন হবে। তাই কর ফাঁকি বন্ধ করতে হবে। অর্থ উপদেষ্টা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এক করদাতার ১০০ কোটি টাকার কর ফাঁকি ধরা পড়েছে। কমিশনারকে ৬০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে মাত্র ১০ কোটি টাকা কর দিয়ে পার পান। করদাতার সাশ্রয় ৩০ কোটি টাকা। এভাবে ফাঁকি কমাতে হলে দুর্নীতি কমাতে হবে। করনীতির ফাঁকফোকর বন্ধ করতে হবে। কারণ, করনীতির ফাঁকফোকর দিয়ে কর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশ করেন। বলা যায়, করহার ও করজাল না বাড়িয়েও কর আদায় বাড়ানো যায়। করনীতি সরল করতে হবে। তাই কর দেওয়ার ব্যবস্থা অনলাইন করতে হবে।

এদিকে কর অব্যাহতি তুলে দেওয়া হচ্ছে। এত দিন ব্যবসায়ীরা রাস্তায় নামেননি। বাজেটের পর কী হয়, তাই দেখার বিষয়।

এবার দেখা যাক, ব্যয়ের কী অবস্থা। বাজেটে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া অনেক খরচ কমানো যাবে না। যেমন সুদ খরচ ও সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। এদিকে মহার্ঘ ভাতার আগামী বাজেটে সাত হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। যেখানে ব্যয়সাশ্রয়ী হতে হবে, সেখানে এ জাতীয় খরচ বৃদ্ধি পোষাবে না। বাজেটের ৮০ শতাংশ ব্যয় কমানোর সুযোগ নেই। ২০ শতাংশ খরচ পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। বিশেষ করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও ভর্তুকি খরচ পুনর্বিন্যাস করার সুযোগ আছে। হয়তো এসব খাতের মোট ব্যয় কমানো যাবে না। তবে খাতের বরাদ্দ পরিবর্তন করা যেতে পারে। যেমন কৃষি যন্ত্রপাতিতে ভর্তুকি দেওয়ার উদ্দেশ্য মহৎ, কিন্তু কার্যকারিতা নেই। মধ্যস্বত্বভোগীরা সব সুবিধা নিয়ে যায়। এডিপিতে অনেক ছোট ছোট অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প আছে। সব মিলিয়ে ব্যয়ের উৎকর্ষ বাড়াতে হবে।

আবার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হচ্ছে। এত অর্থ সরকার ঋণ নিলে বেসরকারি খাত কি ঋণ পাবে? এ ছাড়া ট্রেজারি বিলের সুদের হার ১১-১২ শতাংশ। ব্যাংকগুলো যদি সরকারি খাতে টাকা রেখে এত সুদ পায়, তবে ঝুঁকি নিয়ে কেন বেসরকারি খাতকে ঋণ দেবে।

জাহিদ হোসেন, সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ, বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়

 

বিজ্ঞাপন কর্নার

আমাদের সম্পর্কে

সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতিঃ শাহ নেওয়াজ

উপদেষ্টা সম্পাদকঃ পাভেল মাহমুদ

ইংরেজি পাতার সম্পাদকঃ ফুহাদ হোসেন

ব্যবস্থাপনা সম্পাদকঃ মোঃ বদরুদ্দোজা সাগর

প্রকাশক ও সম্পাদকঃ মোহাম্মদ জাহিদ আলম

অনুসরণ করুন

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন