ইনকিলাব
প্রকাশ:২ জুন, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
রোববার (১ জুন) চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েনতাও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সফরে তিনি চীন-বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিতে বিশাল ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন। সাক্ষাৎকালে তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভোক্তা প্রবণতা, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি এবং পাট ও মৎস্য খাতে যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তাতে চীনা কোম্পানিগুলো বিনিয়োগে আত্মবিশ্বাসী।
সাক্ষাতে ওয়েনতাও বলেন, বাংলাদেশের বাজার ও জনগণের গতিশীলতা দেখে তিনি অভিভূত। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের শপিং মলগুলোতে রাত ১০টার পরও ক্রেতাদের ভিড় তাকে বিস্মিত করেছে। এই প্রবণতা দেখে তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার। তিনি জানান, বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও প্রধান উপদেষ্টার দিকনির্দেশনায় চীনা কোম্পানিগুলোর আগ্রহ আরও বেড়েছে।
অধ্যাপক ইউনূস এই আলোচনায় বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলোর মধ্যে বিশেষভাবে কৃষি, পাট ও নদী-সমুদ্রভিত্তিক মৎস্য শিল্পের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চীনের সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামকে উৎপাদন ইউনিটে পরিণত করা সম্ভব। কৃষিভিত্তিক প্রযুক্তি, জল সংরক্ষণ ব্যবস্থা এবং জমি ব্যবস্থাপনায় চীনের সহযোগিতা দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ আনতে পারে।
ওয়েনতাও বলেন, কৃষি খাতে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতায় চীন আগ্রহী। তিনি বিশেষ করে চাষাবাদের পদ্ধতি, জল সংরক্ষণ এবং জমির উন্নয়ন প্রযুক্তি ভাগাভাগি করার কথা বলেন। তার ভাষায়, “আমার দৃষ্টিতে কৃষি কেবল একটি শিল্প নয়, এটি একটি সামাজিক সংগঠনেরও রূপ।”
চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, চীন সামুদ্রিক মৎস্য শিল্পে আন্তর্জাতিকভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং বাংলাদেশের কাছ থেকেও এ খাতে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব আশা করছে। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে মাছ চাষ ও আধুনিক মৎস্য প্রযুক্তিতে তারা যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে চায়। তিনি গবেষণায় যৌথ অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
পাট শিল্প নিয়েও চীন গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান ওয়েনতাও। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস পাট খাত পুনর্জীবনের সম্ভাবনার যে কথা বলেছেন, তা চীনা প্রতিনিধিদের দৃষ্টি কেড়েছে। চীন বছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ কোটি ডলারের পাট আমদানি করে—যা বাংলাদেশের মোট পাট রপ্তানির ১০ শতাংশ। গবেষণা ও পণ্যের বৈচিত্র্য আনলে এই পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। তাঁর ভাষায়, “পাট আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত উপযোগী পণ্য হয়ে উঠবে, যদি যৌথভাবে গবেষণায় কাজ করি।”
ওয়েনতাও জানান, চীন সম্মেলনে অংশ নেওয়া পাট ব্যবসায়ীদের দিয়ে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের উপর তাৎক্ষণিক গবেষণা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসও সম্মত হন যে, বাংলাদেশের পাট ডিজাইনাররা চীনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করতে পারেন। তিনি চীনা প্রতিনিধিদের আন্তরিকতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রশংসা করেন এবং বলেন, “এত বিনিয়োগকারী এসেছেন—এটা পুরো জাতির জন্য ভালো বার্তা।”
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর সাম্প্রতিক চীন সফরের স্মৃতিচারণ করে জানান, সেখানেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, চীন ও বাংলাদেশের এই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার ভিত্তি আরও সুদৃঢ় হবে।