ইনকিলাব
প্রকাশ:৩ ঘন্টা আগে
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
সরকারের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রগতিশীল বাম দলগুলো। শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ দলগুলো ছাড়া বাকিরা সক্ষমতা অনুযায়ী সমালোচনা করে জনগণকে জাগানোর চেষ্টা করতেন। ’২৪- এর জুলাইয়ের শুরুতে কোটা আন্দোলনসহ সরকারের দুর্নীতি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয় বাম দলগুলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ১৬ জুলাই দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সামনে কর্মসূচি ঘোষণা করে সিপিবি। তবে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবরে ফুসে ওঠা ক্ষোভে দুদকের সামনের কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ মিছিল করেন তারা।
১৮ জুলাই শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও আন্দোলনে সরব দেখা যায় বাম দলকে। ১৯ জুলাই প্রেসক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানারে মিছিল ও সমাবেশের ডাক দেয় সিপিবি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ অন্যান্য দল। আন্দোলনে সব হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে এই দাবি নিয়ে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে পল্টনের দিকে যেতে চায়। কিছুদূর যাওয়ার পরই বাধা দেয় পুলিশ। বাধে সংঘর্ষ।
আরও পড়ুন: হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন খোকন চন্দ্র
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সময় সংবাদকে বলেন,
ধারাবাহিকভাবে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী লড়াইয়ে আমরা বরাবরই সামনের কাতারে ছিলাম। আন্দোলনে আমরা শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করেছি।
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,‘ আমার জানামতে ১৬ জুলাই ছিল রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মের প্রথম বিক্ষোভ। এছাড়া জুলাই বিপ্লবে সিপিবির ৪ কর্মী প্রাণ হারান। আর শতাধিক আহতের তালিকা এখনও আমাদের কাছে আছে।’
এভাবেই ধারাবাহিকভাবে অব্যাহত আন্দোলনে যোগ দেয় বাম দলগুলো। সারা দেশ থেকে খবর আসে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। আহতরা কাতরাচ্ছে হাসপাতালে। ২৬ জুলাই নিহতদের স্মরণ ও বিচার চেয়ে মিছিল করে প্রগতিশীল দলগুলো। জুলাইয়ের দিন যত গড়ায় আন্দোলনের দানাবাধা ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দাবানলের মতো। ৩০ জুলাই জিপিওর সামনে সিপিবির সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবাদী গানের মিছিলে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানানো হয়। পুরো জিপিও এবং আশপাশের রাস্তা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের প্রতিবাদী গানের মঞ্চ হয়ে ওঠে। ১ আগস্ট সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট শাহবাগে মানবন্ধন ও সমাবেশ করে।
আরও পড়ুন: গণ-অভ্যুত্থানের পর ইতিবাচক রাজনীতি প্রচলন করেছে ছাত্রদল: নাছির
আন্দোলন দমাতে বাড়তে থাকে দমনপীড়ন, গুলি, গণগ্রেফতার, কারফিউ। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের গোপনে পাঠানো ৯ দফা কর্মসূচিও গণমাধ্যমের হাত ধরে মানুষের কাছে পৌঁছে। তবে জুলাইয়ের শেষ দিকে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে। তখনই ২ আগস্ট বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজের ব্যানারে ডাক আসে দ্রোহযাত্রার। দ্রোহযাত্রায় মূলত বাম সমর্থক শিক্ষক, রাজনীতিক, ছাত্র, সাংস্কৃতিক কর্মীরা সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। প্রেসক্লাব থেকে শহীদ মিনার এই যাত্রায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা হত্যার বিচারের দাবির সঙ্গে জুড়ে দেন রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণের। ৯ দফা দাবি অঘোষিতভাবে এখান থেকে সরকার পতনের এক দফার দিকে এগিয়ে যায়।
এরপর ৩ আগস্ট শহীদ মিনারের জনস্রোতের সঙ্গে সামিল হয় প্রগতিশীল দলগুলো। দলমত নির্বিশেষে যেই মিলন মোহনা থেকে ঘোষণা হয় দফা এক, দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ।
৪ আগস্ট দিনভর মসনদ রক্ষার লড়াইয়ে শেখ হাসিনা ও তার বাহিনী বনাম বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ছিল সবাই। রক্ষচক্ষু উপেক্ষা করে শহরজুড়ে আগুন জ্বলে। দিনভর নানা ঘটনা শেষে ৫ আগস্ট ওঠে নতুন সূর্য।
আরও পড়ুন: জুলাই আন্দোলনে মারণাস্ত্র ব্যবহার নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি
৫ আগস্ট সারা পৃথিবীর চোখ ছিল ঢাকার দিকে। কঠোর কারফিউ ভেঙ্গে ছাত্র শ্রমিক জনতা সরকারবিরোধী লড়াইয়ে সেদিন সকালেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ে। যারা দেখে যেতে পারেনি তার কয়েক ঘণ্টা ব্যবধানে জনরোষে শেখ হাসিনার পতন। বিজয়োল্লাসে ভাসেন লাখো মানুষ।