ইনকিলাব
প্রকাশ:৩ জুন, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
ছবি সৌজন্যে: কে ক্রাফট।সঙ্গী আশপাশে থাকলে মেজাজ খারাপ হয়? অফিসে কাজ শেষ হওয়ার পরেও বাসায় ফিরতে ইচ্ছে হয় না বা তাড়াতাড়ি কাজে চলে যেতে ইচ্ছে করে? সম্পর্কে কোনো রোমান্টিকতা নেই, এমন কি শারীরিক আকর্ষণও কাজ করে না।
এরকম অবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘রিলেশনশিপ বার্নআউট’ বা সম্পর্ক ভস্মীভূত। আর এই অবস্থায় যুগলরা পড়তেই পারেন।
এই অবস্থায় থাকা দম্পতি বা যুগলরা বাসার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মানসিক চাপে ভোগেন, ক্লান্তি অনুভব করেন। সঙ্গীর ওপর বিরক্ত থাকেন। তারপরও সব ধরনের কাজ করে যান, শুধু এই বিশ্বাস থেকে যে- কোনো কিছুই বদলাবে না।
বন্ধুত্বের মতোই যে কোনো সম্পর্কে যত্ন ও চর্চার প্রয়োজন।
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ‘মডার্ন সেক্স থেরাপি ইন্সটিটিউটস’য়ের নিবন্ধিত মনোবিজ্ঞানী ও সংগঠক র্যাচেল নিডল বলেন, “সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পরিমাণের চাইতে বেশি সম্পদ ও সহায়তা প্রদান করতে গিয়ে যে মানসিক ক্লান্তি তৈরি হয় তাকেই বলে ‘রিলেশনশিপ বার্নআউট’।
“এটা যুগলদের শুধু মানসিকভাবেই ক্লান্ত করে দেয় না পাশাপাশি অন্তরঙ্গতা ও শারীরিক সম্পর্কেও গভীরভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে”- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক সিটি-ভিত্তিক মানসিকরোগ বিশেষজ্ঞ ইভা ডিলন।
তিনি আরও বলেন, “একজন বা দুজনই আবেগগত ও মানসিকভাবে ক্লান্তি ভোগেন। ফলে মানসিক যোগাযোগ ও শারীরিক যোগাযোগ কমে যায়। আর অন্তরঙ্গতা এবং যৌনতা থেকে দূরে থাকে।”
বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের ‘বার্নআউট’ হতে পারে। একজন হয়ত বেশি দায়িত্ব পালন করছেন, সংসারের কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকা, দুজনেই পেশা ক্ষেত্রে অতি চাপে ব্যতিব্যস্ত, মা-বাবা শ্বশুর-শাশুড়ি বা আত্মিয় স্বজনদের নিয়ে খটমট লাগা, দম্পতি হিসেবে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে না তোলা- ইত্যাদি।
“এটা কোনো একক কারণে তৈরি হয় না। বরং ধীরে ধীরে নানান বিষয়ের প্রভাবে সম্পর্কের সুতাগুলো ছিড়ে যেতে থাকে”- বলেন নিডল।
পরিস্থিতি স্বীকার করা
“সম্পর্কে এই অবস্থা তৈরি হলে নিজেকেই স্বীকার করতে হবে। বলতে হবে- ‘হ্যাঁ এটা আমি মানছি’ বা ‘অনুভব করেছি’। আর আপনার সঙ্গীও একই বোধ করছেন”- বলেন যৌনবিষয়ক মার্কিন মনস্তত্ত্ববিদ ইভোন ক্রিস্টিন ফুলব্রাইট।
তিনি আরও বলেন, “এর মূলমন্ত্র হল কেউ কাউকে দোষারোপ বা সমালোচনা না করে বিষয়টা চিহ্নিত করা।”
এক্ষেত্রে সৎ থাকার প্রচণ্ড দরকার রয়েছে।
দায়িত্ব নেওয়া
একে অন্যকে দোষারোপ করা আর দায়িত্ব না নেওয়া হল সম্পর্ক পুড়ে ছাই হওয়ার আংশিক কারণ।
নিউ ইয়র্ক সিটি’র ‘ফ্যামিলি থেরাপিস্ট’ এরিক রোজেনবাম এই ক্ষেত্রে বলেন, “রিলেশনশিপ বার্নআউট’য়ের ক্ষেত্রে একজন মনে করে সঙ্গীকে পরিবর্তিত হতে হবে। এটা আসলে ঠিক না। বরং সেরা পদ্ধতি হবে নিজেই এমন কোনো নিয়ম তৈরি করা যাতে সম্পর্কে ভালো বিষয়গুলো ফিরে আসে।”
এমনও হতে পারে কিছু বিষয় নিজের মধ্যে বদলাতে হবে।
নিউ ইয়র্ক সিটি’র আরেক ‘সেক্স থেরাপিস্ট’ রেবেকা সোকল বলেন, “সঙ্গীর ক্ষেত্রে কী কী নেতিবাচক অনুভূতি করছে সেগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করুন। তারপর লক্ষ করুন কোনো বিষয়গুলো পরিবর্তন করা যায় বা কী কী নিজের মধ্যে বদলানো যেতে পারে।”
যৌথভাবে কী সমস্যা তৈরি হচ্ছে সেসবও লিখতে হবে। আর এটা কাউকে দেখাতে হবে না, নিজেই পড়ে দেখতে হবে কেমন বোধ হয়।
যোগাযোগ রক্ষা করে যাওয়া
সম্পর্কের এই ‘বার্নআউট’ অবস্থা আরও খারাপ হয় যখন বিষয়টা নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয় না।
সোকল বলেন, “মুখোমুখি আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্পর্ক উন্নয়নে দুজন কী করতে পারে সেগুলো আলোচনা করতে হবে। পরস্পরের চাহিদা মেটানো চেষ্টা, ছোট-খাট পরিবর্তন করা- এই ধরনের মতো বিষয়গুলো কথা বলা জরুরি।”
এই আলাপ একদিনে শেষ হবে না, চলবে সব সময়।
ডিলন বলেন, “এই ধরনের আলোচনা মানসিক চাপ তৈরি করলেও মানসিকভাবে স্বচ্ছন্দ বোধ করা যায়।”
দুজনে নতুন কিছু চেষ্টা করা
সঙ্গীকে নিয়ে ব্যক্তিগত সময় কাটানো গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে অফিসের মিটিংয়ের জন্য সময় তারিখ মনে রাখা হয়, তেমন করেই এই ব্যক্তিগত সময় মনে রাখতে হবে।
অভিনব কিছু করার চেষ্টা করা যেতে পারে- পরামর্শ দেন নিডল।
যেমন- একসঙ্গে কোনো কোর্স করা, ‘হাইক’ করা অথবা দুজন মিলে নতুন কোনো রেসিপিতে রান্না করা। এই ধরনের বিষয়গুলো একে অপরের প্রতি নির্ভরশীলতা ও মনোযোগ তৈরি করে।
আর এসব করার সময় ফোনটা সরিয়ে রাখতে হবে অন্য ঘরে। যাতে মনযোগ সরে না যায়।
নিজেকে নিয়েও কাজ করতে হবে
যখন সঙ্গীর সঙ্গী জীবন ভাগাভাগি করা হয় তখন সহজেই ব্যক্তিগত সময় হারিয়ে যেতে পারে।
ফুলব্রাইটের্ ভাষায়, “দিন শেষে নিজের ভস্মীভূত অবস্থা উত্তরণ করতে পারলে সম্পর্কেও উন্নতি ঘটানো যায়। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যায়াম বা ইয়োগা করা, ভালো ঘুম দেওয়া, শখ পূরণ, ধ্যান- এসব আত্ম পরিচর্যার বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে।”
এভাবে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করার মাধ্যমে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের শক্তিও ফিরে পাওয়া যায়।
পেশাদারের সাহায্য নেওয়া
সম্পর্ক উদ্ধারের অভিযানে নিজেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে এমন কোনো কথা নেই। দুজন মিলেই পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা যৌন-প্রশিক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন কৌশল ও সমাধান নেওয়ার চেষ্টা করা উপকারী।
নিডল বলেন, “এই ক্ষেত্রে দেরি করার প্রয়োজন নেই। ‘বার্নআউট’য়ের মতো পরিস্থিতি চিহ্নিত করা মাত্রই থেরাপিস্টের সাহায্য নিতে হবে। যাতে সম্পর্কের গভীরে ক্ষত তৈরি হয়ে না যায়।
‘বার্নআউট’ চিহ্নিত করাও স্বাস্থ্যকর সম্পর্ক চালিয়ে নেওয়ার জন্য জরুরি।