ইনকিলাব
প্রকাশ:৩ জুন, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
বিবিসি লিখেছে, ৩৬ বছর বয়সী এই গায়িকা বলেছেন নিজের জয় একটা সময়ে তার কাছে অকল্পনীয় বলে মনে হয়েছিল। তবে সেই দুঃশ্চিন্ত এখন অতীত সুইফেট কাছে।
“বলতে পারেন, আমার সবচেয়ে বড় স্বপ্ন সত্যি হল।”
গানের আইনি স্বত্ব নিয়ে দীর্ঘ লড়াইয়ের শুরু থেকে ভক্তরা সমর্থন জানিয়েছিলেন এই সংগীত তারকাকে। সে কথা স্মরণ করে সুইফ তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি কৃতজ্ঞ, আপনারা আমাকে আমার সৃষ্টির সঙ্গে ফের মিলিয়ে দিয়েছেন। শুরু থেকে সঙ্গে ছিলেন আপনারা।”
আর এই ঘটনার মাধ্যমে নিজের প্রথম ছয় অ্যালবামের মাস্টার রেকর্ডিংয়ের মালিকানা ফিরে পেলেন সুইফট।
ওয়েবসাইটে সুইফট লিখেছেন, “যেদিন জানতে পারলাম সত্যিই এটা ঘটছে, আনন্দে কেঁদে ফেলেছি। আমি আজ বলতে পারি, আমি যেসব গান লিখেছি, গেয়েছি, রেকর্ড করেছি, সব এখন আমার।”
সুইফটের কথায়, "যে শিল্পের জন্য আমি আমার জীবন উৎসর্গ করেছি, অথচ বলতে পারছিলাম না সেটি আমার নিজের। আমি প্রায় ভাবা বন্ধ করে দিয়েছিলাম যে এটি কখনও ঘটতে পারে। কিন্তু এখন সব অতীত।"
২০২০ সালে সুইফেটর এই অ্যালাবামগুলো বিক্রি হয়েছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলারে। পরে সংগীত পরিচালক স্কুটার ব্রন ক্যাটালগ বিক্রি করে দেন লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক প্রযোজনা সংস্থা শ্যামরক হোল্ডিংসকে।
এখন এই শ্যামরকের কাছ থেকেই মালিকানা কিনেছেন সুইফট।
টাকার অঙ্ক প্রকাশ করা না হলেও বিলবোর্ড জেনেছে প্রথম ছয় অ্যালবামের মালিকানা ফিরে পেতে সুইফটকে খরচ করতে হয়েছে ৩৬০ মিলিয়ন ডলার।
ঘটনার শুরু যেখানে
ঘটনার শুরু ছয় বছর আগে, ২০১৯ সালের জুনে। সে সময় সংগীত পরিচালক স্কুটার ব্রন সুইফটের সাবেক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান বিগ মেশিন রেকর্ডস কিনে নেন।
ফলে সুইফটের প্রথম ছয় অ্যালবাম ‘টেলর সুইফট’, ‘ফিয়ারলেস’, ‘স্পিক নাউ’, ‘রেড’, ‘১৯৮৯’ ও ‘রেপুটেশনের' মালিক হয়ে যান স্কুটার ব্রন।
এ ঘটনায় প্রথমে ক্ষোভ এবং পরে দুঃখ প্রকাশ করেছেন সুইফট।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে গায়িকা জানিয়েছিলেন ছয়টি অ্যালবামের জন্য তার হৃদয় ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
গানের স্বত্ব হারানোর পর সুইফট ঘোষণা দিয়েছিলেন, পুরোনো গানগুলো ফের নতুন করে রেকর্ড করবেন তিনি।
পরে সেগুলো পরিচিতি পায় ‘টেলরস ভার্সন’ নামে। এই পর্যন্ত চারটি অ্যালবাম নতুন করে রেকর্ড করেছেন সুইফট।
তবে সে সব অ্যালবামের সাথে কয়েকটি নতুন গান ও পুরোনো কিছু অপ্রকাশিত ট্র্যাকও সামনে আনেন সুইফট।
‘মাস্টার রেকর্ডিং’ কী
একটি গানের মূল রেকর্ডকৃত সংস্করণকে বলা হয় মাস্টার রেকর্ডিং।
অর্থাৎ যিনি গানটির মালিক, তিনিই নির্ধারণ করেন গানটি কোথায়, কীভাবে ব্যবহৃত হবে। গানটি কোনো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আসবে কী না, নাকি সিডি আকারে প্রকাশ হবে অথবা চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হবে কী না, সব কিছুর সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার থাকবে গানের মালিকের।
সুইফট নিজের গান নিজে রচনা করে থাকেন। এ জন্য তার গানের লেখক হিসেবে প্রকাশনা অধিকার নিজের কাছে রেখেছিলেন শুরু থেকেই। ফলে গানগুলোর লাইসেন্স নিয়ে নিজেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন।
১৪ বছর বয়সে প্রযোজনা সংস্থা বিগ মেশিনের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সুইফট। সে সময় মাস্টার রেকর্ডিংয়ের মালিকানা নিজেদের কাছে রেখে দেয় প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিকানা ছিল প্রযোজকের স্কট বোরচেটার।
চুক্তির মেয়াদ শেষে ২০১৮ সাল সুইফট চলে যান রিপাবলিক রেকর্ডসে।
২০১৯ সালে বোরচেটা তার প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে দেন স্কুটার ব্রনকে।
সুইফট গণমাধ্যম থেকে ওই বিক্রির খবর পেয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। সে সময় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, তার প্রথম জীবনের শ্রমকে কেউ এভাবে ছিনিয়ে নিতে পারে, সেটি তার ভাবনার বাইরে।
হতাশা প্রকাশ করে সুইফট বলেছিলেন, "আমার নিজের গানের স্বত্ব আমি কিনে নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেই সুযোগ পাইনি।"
২০১৯ সালে বিলবোর্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুইফট বলেছিলেন, "আমি চাই আমার গান বাঁচুক, সিনেমায় থাকুক, বিজ্ঞাপনেও বেজে যাব। কিন্তু তখনই, যখন আমি গানগুলোর মালিক।"
২০২৩-২৪ সালে সংগীতের যে সফর ‘ইরাস ট্যুর’ নিয়ে টেইলর ঘুরেছেন দেশে দেশে, সেখান থেকে কেবল টিকেট বিক্রি করে আয় হয়েছে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
গানের মালিকানা ফিরে পেয়ে ওই সফর নিয়ে সুইফট বলেছেন, “ইরাস ট্যুরের সাফল্য আমাকে নিজের গান ফিরে পেতে সাহায্য করছে।”
ওয়েবসাইটে সুইফট লিখেছেন, যখন নতুন শিল্পীরা বলেন যে তারা তারা চুক্তি করার সময় মাস্টার রেকর্ডিংয়ের অধিকার নিজেদের কাছে রাখছেন, বিষয়টি তাকে (টেইলর সুইফট) আনন্দিত করে।
তরা কথায়, “আমি বুঝতে পারি আমার লড়াই কতটা সার্থক।”