ইনকিলাব
প্রকাশ:৩ জুন, ২০২৫
ফাইল ছবি | ইনকিলাব
ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: রয়টার্স।
রাশিয়ার সঙ্গে আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের আশা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেইন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের সোমবারের বৈঠকের পর জেলেনস্কি বলেন, চলমান আলোচনা শেষ হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এর ফলে আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময় হবে।
আলোচনায় অংশ নেওয়া ইউক্রেইনের প্রতিনিধিদলের প্রধান নিশ্চিত করে জানিয়েছেন যে, রাশিয়া এবার তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার রূপরেখা দিয়ে একটি স্মারক হস্তান্তর করেছে।
ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
রাশিয়া জানিয়েছে, তারা যুদ্ধে নিহত ৬ হাজার সেনার দেহাবশেষ বিনিময়ে রাজি হয়েছে এবং মৃতদেহ সংগ্রহের জন্য রণক্ষেত্রের সম্মুখসারির কিছু স্থানে দুই/তিন দিনের যুদ্ধবিরতি করার প্রস্তাব দিয়েছে।
দ্বিতীয় দফার এই আলোচনা চলে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় ধরে। এতে দুইপক্ষ কেবল আরও যুদ্ধবন্দি বিনিময় করতে রাজি হওয়া ছাড়া বড় আর তেমন কোনও অগ্রগতি হয়নি।
দুই পক্ষই সব অসুস্থ এবং গুরুতর আহত যুদ্ধবন্দি এবং যে সেনাদের বয়স ২৫ এর নিচে তাদেরকে বিনিময় করতে রাজি হয়েছে। তবে এই বন্দিবিনিময় কখন হবে তার কোনও সময় উল্লেখ করা হয়নি।
ওদিকে, যুদ্ধ কিভাবে বন্ধ করা হবে তা নিয়ে রাশিয়া এবং ইউক্রেইনের মধ্যে আলোচনায় গভীর বিভক্তি দেখা গেছে। দুইপক্ষের অবস্থান ছিল একেবারে ভিন্ন মেরুতে।
আলোচনায় ফের ইউক্রেইনের প্রধান দাবি—শর্তহীন যুদ্ধবিরতির—প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে রাশিয়া। এই প্রস্তাব ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী কোনও সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব নয় বলেই মনে করছে কিইভ।
ইউক্রেইনের ধারণা, মস্কো আদতে যুদ্ধ বন্ধ করতে আগ্রহী নয়। দেশটির প্রতিনিধি দলের প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেন, এই আলোচনার মূল বিষয়গুলো কেবল প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও প্রেসিডেন্ট পুতিনের সরাসরি বৈঠকের মাধ্যমেই সমাধান হতে পারে।
তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলতি মাসের মধ্যেই এমন একটি শীর্ষ বৈঠক আয়োজন করা উচিত।
উভয় পক্ষই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চাপের মুখে রয়েছে। ইউক্রেইন চাইছে জন্য জরুরি মার্কিন সামরিক সহায়তা। অন্যদিকে, রাশিয়ার চাওয়া অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়া। এর মধ্যে কেউ কেউ মনে করছেন, রাশিয়া কেবল কৌশলগতভাবে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে কোনও যুদ্ধবিরতির ইচ্ছা তাদের নেই।
ইউক্রেইনের কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়া গ্রীষ্মে নতুন হামলার পরিকল্পনা করছে এবং আরও এলাকা দখলের চেষ্টা হতে পারে। বিপরীতে রুশ কর্মকর্তারা এখনো এমন সব দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন, যেগুলো ইউক্রেইন আগেই 'অগ্রহণযোগ্য' বলে প্রত্যাখ্যান করেছে।
লিথুয়ানিয়ায় কথা বলার সময় ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আবারও রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান। তার ভাষায়, “যতক্ষণ না পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে, ততক্ষণ পুতিন যুদ্ধ থামানোর নামে সবাইকে ঘোরাতে থাকবেন।”
ইউক্রেইনের পক্ষ থেকে স্থল, জল ও আকাশপথে অন্তত ৩০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির দাবি জানানো হলেও তা এখনও মানতে নারাজ রাশিয়া। এর পরিবর্তে মস্কো ‘দীর্ঘস্থায়ী শান্তি’র কথা বলছে, যার প্রস্তাব রয়েছে ইউক্রেইনকে দেওয়া স্মারকে।
ইউক্রেইনের প্রতিনিধি দলের প্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ বলেছেন, স্মারকটি এখন তারা পর্যালোচনা করবেন এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে এক সপ্তাহ সময় নেবেন। তবে ওই রুশ স্মারকে কী ধরনের প্রস্তাব রয়েছে, তা প্রকাশ করেনি দুই পক্ষের কেউই।
আলোচনায় বড় কোনও অগ্রগতি না হলেও দুই পক্ষই বলেছে, ইস্তাম্বুলে সোমবারের এই বৈঠক ‘গঠনমূলক’ হয়েছে।