এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনী। কপিরাইট © ২০২৫
সাপ্তাহিক ইনকিলাব কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনী। কপিরাইট © ২০২৫
সাপ্তাহিক ইনকিলাব কর্তৃক সর্বসত্ব ® সংরক্ষিত
প্রকাশিত:
৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
জানা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ভর্তুকির আওতায় বেসরকারি আমদানিকারকদের মাধ্যমে দুই লাখ টন টিএসপি, পাঁচ লাখ টন ডিএপি, ২ লাখ ৫০ লাখ টন এমওপি এবং শূন্য দশমিক ২০ লাখ টন এমএপি সার সংগ্রহ করবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র ও বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেসরকারি খাতের মাধ্যমে সরকার নন-ইউরিয়া সার হিসেবে পরিচিত টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি আমদানির জন্য প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে টেন্ডার আহ্বান করে। এবার সেটা করা হয়েছে তিন মাসেরও বেশি সময় পর। যেখানে এ সময়ের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে নন-ইউরিয়া সারের দাম ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, যার ফলে সরকারের আড়াই থেকে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
শুধু খরচ বাড়বে তা-ই নয়, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু সিদ্ধান্তে এখনো সার আমদানির জন্য পর্যাপ্ত কার্যাদেশ পর্যন্ত প্রদান করতে পারেনি। কারণ যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সারের আমদানিকারক খোঁজা হচ্ছে, তাতে করে বেসরকারি আমদানিকারকরা রাজি হচ্ছে না। সাড়ে নয় লাখ টন নন-ইউরিয়া সার আমদানির জন্য গত ২৪ জুলাই একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। যেখানে টেন্ডার দাখিলের সময় দেওয়া হয় ৬ আগস্ট পর্যন্ত। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেওয়া হতো। কিন্তু এবার সেই নিয়ম বদলে ফেলা হয়েছে। উল্টো কৃষি মন্ত্রণালয় আমদানিকারকদের একটি দর প্রস্তাব করে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত দামে সার আমদানির জন্য রাজি থাকলে গত ১৭ আগস্টের মধ্যে টেন্ডারে অংশ নেওয়া আমদানিকারকদের সম্মতিপত্র চেয়েছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেদিন বিষয়টি নিয়ে দিনভর বৈঠক করেও এর সুরাহা করতে পারেননি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম। সর্বশেষ গতকাল বুধবার পর্যন্ত সাড়ে নয় লাখ টন সারের ন্যূনতম পরিমাণও আমদানির কার্যাদেশ দিতে পারেনি সরকার।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের মূল্য নির্ধারণ কমিটি টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের দর মূল্যায়ন না করে উল্টো তাদের টিএসপি, এমওপি ও ডিএপি সারের একটি প্রাইস অফার করে। এ প্রাইসগুলো দেওয়া হয় আবার দেশ উল্লেখ করে। এতেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। আমদানিকারকদের দাবি, সরকার আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে সারের যে এফওবি মূল্য তার চেয়েও কম মূল্য প্রস্তাব করেছে সার আমদানির ক্ষেত্রে। যে কারণে জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং কেউই এ প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমদানিকারকদের সিন্ডিকেট ভাঙতেই মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া রপ্তানিতে চীন একটি বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু নিজ দেশের সুরক্ষার জন্য তারা সারের রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে এবং কোটা সিস্টেম চালু করেছে। প্রতি মাসে তারা কী পরিমাণ সার রপ্তানি করবে তার একটি প্রস্তাব করে। অন্যদিকে নন-ইউরিয়া সরবরাহকারী আরেক দেশ মরক্কোর কাছে এখন নতুন রপ্তানির সার নেই। কারণ দেশটি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, সেগুলো সরবরাহ করছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব করা দরের মধ্যে মরক্কো থেকে টিএসপি আমদানির জন্য টনপ্রতি ৬৯৪ ডলার, তিউনেশিয়া থেকে আনলে টনপ্রতি ৭০৪ ডলার, লেবানন থেকে আনলে ৬৮৮ ডলার এবং মিসর থেকে আনলে ৬৮৮ ডলার দর প্রস্তাব করা হয়েছে। চীন থেকে ডিএপি আমদানিতে টনপ্রতি দর প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৪৮ ডলার, রাশিয়া থেকে ৮৬৫ ডলার, মরক্কো, জর্ডান, মিসর থেকে আনলে ৮৭৪ ডলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এমওপি সারের ক্ষেত্রে রাশিয়া, কানাডা ও তুর্কমেনিস্তান থেকে ৩৮২ ডলার, চীন থেকে ৩৭৬ ডলার এবং জার্মানি থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ৩৮০ ডলার দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমামকে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।